বিদায় চেস্টার বেনিংটন
চেস্টার বেনিংটন
প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে যেতেন চেস্টার বেনিংটন। টেলিভিশনে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান বা রেকর্ডিং চলছে, গাইতে গাইতে হঠাৎ চুপ। মনে হবে, গানের কথা ভুলে গেছেন!
চেস্টারের মৃত্যুর পর রেডিও ডটকমকে কথাগুলো বলেছিলেন লিনকিন পার্কের সদস্য মাইক শিনোডা। হারানো বন্ধুর কথা মনে পড়াতেই নীরবতা আচ্ছন্ন করত চেস্টারকে, তা কি আর কাউকে বলে দিতে হয়? অথচ চেস্টার এমনটা ছিলেন না। কৃষক যেমন ধানখেতে পাকা ধানের ওপর হাত বোলান, তেমনি চেস্টারও। মঞ্চের নিচে ভক্তদের বাড়িয়ে দেওয়া শত শত হাত একইভাবে ছুঁয়ে দিতেন তিনি।
বন্ধু হারানোর যন্ত্রণা যে কতটা তীব্র হতে পারে, চেস্টার সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝিয়েও গেছেন বিশ্ববাসীকে। এবার পৃথিবীর রকপ্রেমীদের বোঝার পালা। যন্ত্রণায় বাস করতে করতে তাঁরা বুঁদ হয়েছেন ‘হাইব্রিড থিওরি’তে বা প্রিয় শিল্পীর অন্য গানগুলোতে—যেগুলোয় জীবন্ত চেস্টার বেনিংটন।
চেস্টারের বয়স যখন মাত্র সাত, তখনই ঘটে যায় অঘটন। বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে খেলার বয়স তখন। মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল, বন্ধুরাও খুব বেশি মিশতে চাইত না তাঁর সঙ্গে। প্রায় ছয়-সাত বছর গেল এভাবে। নিঃসঙ্গতা তখনই তাঁর ভেতরে বাসা বাঁধল। একসময় ডুব দিলেন সর্বনাশা মাদকে। এরই মধ্যে যোগ দিলেন লিনকিন পার্কে আর সেটাকে প্রস্তুত করে ফেললেন পৃথিবীর সব থেকে জনপ্রিয় গানের দল হিসেবে। রকের অন্ধ অনুসরণ করেনি দলটি। হেভি মেটাল, হিপহপ, অলটারনেটিভ রক, ফাংক্, গ্রাংগ্ মিলিয়ে একটা ভিন্ন ঘরানা, নু-মেটালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন নতুন প্রজন্মকে। তাঁদের প্রথম অ্যালবাম হাইব্রিড থিওরি জিতে নিয়েছিল কোটি তরুণের হৃদয়।
প্রথম অ্যালবাম বেরোনোর আগে আগে চেস্টারের পরিচয় হয় আরেক রক সম্রাট ক্রিস কর্নেলের সঙ্গে। তাঁদের পরিচয় রূপ নেয় গভীর বন্ধুত্বে। ২০০৭-০৮ সালে দুজনে এক মঞ্চে গেয়েছেন, আড্ডা দিয়েছেন। গত মে মাসে সেই বন্ধুর আত্মহননের শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন চেস্টার। সেই রাতে জিমি কিমেলের সরাসরি অনুষ্ঠানে বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর দল গেয়ে শোনায় ‘ওয়ান মোর লাইট’ গানটি। বন্ধুকে উদ্দেশ করে সামাজিক গণমাধ্যমে সেদিন একটি চিঠিও লিখেছিলেন চেস্টার।
ক্রিসের ৫৩তম জন্মদিনে মাত্র ৪১ বছর বয়সে ক্রিসের মতোই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করলেন চেস্টার। কেউ বলছেন, বন্ধু হারানোর বেদনা, কেউ বলছেন অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণেই এমনটা করতে পেরেছেন তিনি। বেশ কয়বার মনোচিকিৎসকের কাছে যেতে হয়েছিল তাঁকে। আবার অন্য একটি পক্ষ বলছে, সম্প্রতি রাজনৈতিক ব্যাপারে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন দুবার গ্রামিজয়ী চেস্টার। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।
চেস্টারের বিদায় একটা বিরাট ক্ষত সৃষ্টি করেছে রকপ্রেমীদের হৃদয়ে। তাঁকে ছাড়া লিনকিন পার্ক কীভাবে সামনে এগোবে, সেটিও ভাবতে পারছেন না বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত। তবু চেস্টার বেনিংটনের গানে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, ‘শেষ পর্যন্ত কিছুই যায় আসে না’ (ইন দ্য এন্ড)।
সামাজিক মিডিয়ায় প্রয়াত বন্ধু ক্রিসকে লেখা চেস্টারের চিঠি
প্রিয় ক্রিস,
গত রাতেই আমার স্বপ্নে এল বিটলস। মাথার ভেতর বুনো রকের বাজনা নিয়ে জেগে উঠে দেখলাম স্ত্রীর উদ্বিগ্ন মুখ। সে জানাল, আমার বন্ধু নাকি চিরবিদায় নিয়েছে। তোমার স্মৃতি এখন আমাকে ভাসাচ্ছে, কাঁদাচ্ছে। বেদনাহত আমি এখনো কাঁদছি আর কৃতজ্ঞতা বোধ করছি তোমার ও তোমার সুন্দর পরিবারের সঙ্গে চমৎকার কিছু সময় কাটাতে পেরেছি বলে। তুমি কখনোই জানবে না যে কতভাবে তুমি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছ। তোমার প্রতিভা ছিল শুদ্ধ ও অতুলনীয়। তোমার কণ্ঠ আনন্দ-বেদনা, ক্ষোভ-ক্ষমা, প্রেম-যন্ত্রণার মিশেলের এক চমৎকার সমন্বয়। মনে হয় সেটা আমাদের সবার কথাই বলছে। তুমি আমাকে সেটা বুঝতে সাহায্য করেছ। নিজের স্বপ্নটার কথা ভাবতে ভাবতেই কেবল একটা ভিডিওতে দেখলাম তুমি বিটলসের ‘অ্যা ডে ইন দ্য লাইফ’ গানটা গাইছ। আমি ভাবতে চাই, তুমি তোমার নিজস্ব নিয়মে ‘বিদায়’ নিচ্ছ। তুমিহীন পৃথিবী আমি ভাবতেই পারছি না। দোয়া করি, তোমার পরবর্তী জীবন শান্তিময় হোক। তোমার স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-পরিবারের প্রতি আমার ভালোবাসা। আমাকে তোমার জীবনের অংশ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমার সব ভালোবাসাসহ।
nothing to say
ReplyDeletei miss you
ReplyDelete